Friday, June 21, 2019

ওয়াইফাই থেকে ডেটা সেইভ রাখা আসলেই সম্ভব?


মোবাইল, ল্যাপটপ সহ সমস্ত ইলেক্ট্রিক ডিভাইস চার্জ করে পরবর্তীতে ব্যবহার করা যায়। এই জিনিসটাই আমাদের জীবন ব্যবস্থা কতটা সহজ করে ফেলছে তা কল্পনা করা যাবেনা। পাওয়ার ব্যাংক চার্জ করে মানুষ দুনিয়া ঘুরে। পাহাড় কিম্বা সাগরের মাঝখানে সব যায়গায় সচল থাকে ইলেক্ট্রিক ডিভাইস। ইলেক্ট্রিসিটি সংরক্ষণের এই পদ্ধতির আবিষ্কারককে সম্ভব হলে আমি নোবেল দিতাম। যাইহোক ইলেক্ট্রিক ডিভাইস নিয়ে কথা বলা আলোচ্য বিষয় না।

একজন সেলুলার নেটওয়ার্ক ইউজারের কাছে ওয়াইফাই কিম্বা ব্রডব্যান্ডের গুরুত্ব কতটা তা মোটামুটি সবাই জানি। যে জন্মের পর পরই ওয়াইফাই এর চেহারা দেখছে কিম্বা জীবনে কখনো মোবাইল ডেটা ব্যাবহার করার দরকার পড়েনাই তার কথা বাদই দিলাম; যদিও আমি মনে করিনা সেরকম প্রাণী বাংলাদেশে এখনো জন্ম নিয়েছে। আর যে প্রথম ওয়াইফাই এর চেহারা দেখছে তার কাছে এইটার অনুভূতি অনেকটা মানুষখোর বাঘের মত কিম্বা বিরিয়ানি খাদকের মত।  এখনো মনে পড়ে শুধু ওয়াইফাই এর জন্য বসুন্ধরায় গিয়ে কত কত সময় পার করছি।

যাইহোক, স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন আসবেই যদি এই ডেটা সংগ্রহ করে যদি বাসায় নিয়ে যাই তাহলে একই স্পিডে বিনা খরছে নেট ব্রাউজ করতে পারবো। এটা খুবই স্বাভাবিক এবং মজার একটা প্রশ্ন! এই প্রশ্নটা করার মানে হলো ইন্টারনেট কিভাবে কাজ করে এই ব্যপার সম্পর্কে তার আইডিয়া নাই। আমার তো ধারনা ৯০% ইন্টারনেট ইউজারই জানেনা আসলে এই জিনিসটা কিভাবে কাজ করে। কিন্তু আমাদের এমন একটা জাতি কেউ যখন সাহস করে কোন প্রশ্ন করে উত্তর নিজে জানি আর না জানি  পচাইতে পচাইতে রীতিমত প্রশ্নকর্তার প্যান্ট খুলে দেই। যাইহোক আমি নেটওয়ার্কিং এর ক্ষুদ্র জ্ঞানে  সবার কাছে সহজবোধ্য করে বুঝানোর চেষ্টা করবো আসলে ব্যাপারটা কি!

মনে করুন আপনার পিসির সাথে আপনার ফোন ডেটাকেবল দিয়ে কানেক্টেড। আপনি চাইলে আপনার পিসি দিয়ে ফোনের সব ডেটা দেখতে পাবেন। একইভাবে আপনার দুইটা পিসি যদি পরস্পর ক্যাবল দিয়ে কানেক্টেড হয় তাহলে এক পিসি থেকে অন্য পিসির সমস্ত ডেটা দেখতে পাবেন। ডেটা বলতে আমি বুঝাচ্ছি অডিও, ভিডিও, ছবি, অন্যন্য ডকুমেন্টস। আপনার একটা পিসি যদি উগান্ডা থাকে এবং একইভাবে ক্যাবল দিয়ে কানেক্টেড থাকে তাহলে আপনি চাইলে বাংলাদেশে বসেই ওই পিসিতে যা যা আছে সবই দেখতে পাবেন বা ট্রান্সফার করতে পারবেন । এভাবে যদি পৃথিবীর সবগুলো পিসি বা সার্ভারকে কানেক্ট করা যায় তাহলেই হয়ে যায় তাহলে আপনি পৃথিবীর সব পিসি কিম্বা সার্ভারে যা আছে তাই দেখতে পাবেন। এটাই  ইন্টারনেট। তার মানে এটা বুঝা গেলো ইন্টারনেট মানে হলো পৃথিবীর সব পিসি বা সার্ভারের কানেকশন।

মনে করুন আপনি ফেইসবুক ডটকমে ঢুকলেন! এত এত প্রোফাইল, ভিডিও, ছবি দেখতে পাচ্ছেন! এগুলোর কোনটাই আপনার পিসিতে নাই। তাহলে এগুলো কোথা থেকে আসছে? এগুলো সবই আসতেছে ফেইসবুকের ডেটা সেন্টার থেকে। তার মানে কি ব্যাপারটা এই দাঁড়ালো ফেইসবুকের ডেটা সেন্টারের সাথে আপনার পিসির কানেকশন আছে? হ্যাঁ! ঠিক ধরেছেন। আপনার পিসি ইন্টারনেটে কানেক্টেড থাকা মানে ফেইসবুকের সার্ভারের সাথেও কানেক্টেড। এখন কথা হলো পৃথিবীর সবগুলো পিসির সাথে কানেকশন কেমনে করলো? ভাভাগো ভাভা!

পৃথিবীতে যতগুলো দেশ আছে সবগুলো অপটিক্যাল ফাইবার দিয়ে কানেক্টেড। এই ক্যবলগুলো ডেটা ট্রান্সমিশন স্পিড খুবই  উচ্চমানের। ১০০ থেকে ১৫০ জিবিপিএস এর মত। এই ক্যাবলগুলো মুলত সাগরের তলদেশে বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। সেই ক্যাবলেরই একটা প্রান্ত প্রতিটি দেশেই আছে। এটাকে বলা হয় ল্যান্ডিং পয়েন্ট। বাংলাদেশে দুইটা ল্যান্ডিং পয়েন্ট আছে একটা হল কক্সবাজারে আরেকটা হল কুয়াকাটায়। পাশের দেশ মায়ানমারে আছে ৩টা, ইন্ডিয়ায় আছে বেশ কয়েকটা। পুরো দেশের অন্যান্য সার্ভার বা পিসি এই ল্যান্ডিং পয়েন্টের সাথে কানেক্টেড। এজন্য আমরা দেশের বা দেশের বাইরের যেকোন ওয়েবসাইট/ডেটা দেখতে পাই। সাবমেরিন ক্যাবলের ম্যাপ দেখলে ব্যাপারটা আরো পরিষ্কার হবে।
Source- https://www.submarinecablemap.com/

তো এখানে দুইটা প্রশ্ন আসতে পারে এক, ইন্টারনেট আমার ঘর পর্যন্ত কিভাবে আসে; দুই, আমরা যে ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহার করতেছি সেখানে তো তার দিয়ে কানেক্টেড না, তাহলে কেমনে কি!

বাসাবাড়ি পর্যন্ত ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছানোর ক্ষেত্রে মোট ৩ টা কোম্পানি কাজ করে-
Tier 1 কোম্পানিঃ এরা সাগরে অপটিকাল ফাইভার ক্যাবল বিছিয়ে রেখেছে এবং ভিবিন্ন দেশে ল্যান্ডিং পয়েন্ট রেখেছে। যেমন, বাংলাদেশে বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি

Tier 2 কোম্পানিঃ এদের কাজ হলো ল্যান্ডিং পয়েন্ট থেকে সংযোগ নিয়ে সারাদেশে সাপ্লাই দেয় এবং নির্দিষ্ট পরিমান ডেটার জন্য নির্দিষ্ট পরিমান এমাউন্ট Tier-1 কে দেয়। যেমন, এয়ারটেল, গ্রামীনফোন, টেলিটক। এরাই সিগ্নালের মাধ্যমে ইন্টারনেট ছড়িয়ে দেয় যা আমরা মোবাইলে ব্যাবহার করি। এই কাজটা  গ্রামীন, এয়ারটেল নিজ নিজ টাওয়ারের মাধ্যমে করে থাকে।

Tier 3 কোম্পানিঃ এরা হচ্ছে ভিবিন্ন ISP কোম্পানি যারা লোকালি বা এরিয়া ভিত্তিক  ইন্টারনেট সংযোগ প্রোভাইড করে। যেমন, ধানমন্ডিতে- MazedaBD, KS Network ! সে সংযোগই অনেকে পিসিতে সরাসরি ক্যাবলের মাধ্যমে কানেকশন নেয় অনেকে বাসার রাউটারে নেয়! রাউটার ওয়াইফাই সিগ্নালের মাধ্যমে নির্দিষ্ট রেঞ্জের মধ্যে ডিভাইসগুলোতে ইন্টারনেট সংযোগ পৌঁছে দেয়।

সো, বুঝাই যাচ্ছে ইন্টারনেট ব্রাউজ মানেই হলো ডাটার দৌড়াদুড়ি। অথ্যাৎ, নির্দিষ্ট একটা ডেটা দেখার জন্য রিকুয়েস্ট করি সে ডেটা টা রিপ্লাই হিসেবে আমার কাছে চলে আসে। আমরা যখন কোন একটা ওয়েবসাইট ব্রাউজ করার চেষ্টা করি সেটা রিকুয়েস্ট হিসেবে ওই ওয়েবসাইট যেখানে হোস্ট করা আছে সেখানে রিকুয়েস্ট হিসেবে যায় তারপর রিপ্লাই হিসেবে আমাদেরকে সেই পেইজটা দেখিয়ে দেয়। ওয়েবসাইটটা যদি দেশের বাইরে কোথাও হোস্ট করা থাকে তাহলে রিকুয়েস্টটা ল্যান্ডিং পয়েন্ট হয়ে সার্ভার পর্যন্ত যত পথ অতিক্রম করে তারপর রিপ্লাই হিসেবে আমাদেরকে ওই পেইজটা দেখিয়ে দেয়।

এরকম হাজার রিকুয়েস্ট এদিক সেদিক প্রতিনিয়ত দোড়াদুড়ি করছে, অগনিত ডেটা অপটিকাল ফাইভার ক্যাবল দিয়ে এদিক সেদিক যাচ্ছে প্রতি মুহুর্তে। কিন্তু একজনের রিকুয়েস্ট অন্যজনের কাছে যায়না, কিম্বা একজনের রিপ্লাই আরেকজনের কাছে যায়না। এই ব্যাপারগুলোর জন্য কম্পিউটার সায়েন্সে নেটওয়ার্কং নামের আলাদা একটা সাবজেক্টই আছে। কারো জানার আগ্রহ থাকলে Data Communication and Networking by Forouzan এবং Computer Networking: A Top-Down Approach by Kurose and Ross পড়তে পারেন।

আমাদের একটা রিকুয়েস্ট কোন কোন দেশ হয়ে সার্ভার পর্যন্ত যায় তা আমরা নিজেরাই চেক করতে পারি অথবা আমরা চাইলেই দেখতে পারি আমাদের ব্রাউজ করা ফেইসবুক বা যেকোন ওয়েবসাইট কোন সার্ভার থেকে আসতেছে। পুরোটাই নেটওয়ার্কিং এর খেলা।

তো কথা হলো ইন্টারনেট সংযোগই যদি না থাকে ডেটা আসবে কিভাবে, রিকুয়েস্ট যাবে কিভাবে? আম্রিকায়  থাকা ফেইসবুকের ডেটা সেন্টার থেকে ফেইসবুকের পেইজ দেখাবে কিভাবে? হোপফুলি ব্যাপারগুলো এখন বুড়িগঙ্গা পানির মত অপরিষ্কার নয়।

তথ্যসূত্র-
১। https://en.wikipedia.org/wiki/Submarine_communications_cable
২। https://www.submarinecablemap.com/
৩। https://en.wikipedia.org/wiki/Internet_service_provider

No comments:

Post a Comment